কাজ: ধাতু ও অ্যাসিডের বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ। প্রয়োজনীয় উপকরণ: ম্যাগনেসিয়াম রিবন, পাতলা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, স্পিরিট ল্যাম্প ও টেস্ট টিউব। পদ্ধতি: টেস্টটিউবের অর্ধেক পরিমাণ ভরে পাতলা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড নাও। ম্যাগনেসিয়াম রিবনের কয়েকটি ছোটো ছোটো টুকরা অ্যাসিডে ছেড়ে দাও। কোনো গ্যাসের বুদবুদ উঠছে কি? না উঠলে স্পিরিট ল্যাম্প জ্বালিয়ে টেস্ট টিউবের তলায় হালকা তাপ দাও। গ্যাসের বুদবুদ উঠছে কি? এটি ম্যাগনেসিয়াম ও হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হাইড্রোজেন গ্যাসের বুদবুদ। এটি হাইড্রোজেন গ্যাস কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখতে পার। টেস্ট টিউবের মুখে একটি জ্বলন্ত দিয়াশলাই ধরে দেখ কি ঘটে? পপ পপ শব্দ করে জ্বলছে? হ্যাঁ, ঠিক তাই। এটি হাইড্রোজেন ছাড়া অন্য গ্যাস হলে এমন শব্দ হতো না। ধাতুর সাথে পাতলা হাইড্রোক্লোরিক এসিডের বিক্রিয়া কী ধরনের পরিবর্তন? অবশ্যই রাসায়নিক পরিবর্তন। কারণ এতে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয়েছে। ম্যাগসিয়াম রিবন ছাড়াও তোমরা জিংক, এলুমিনিয়াম, কপার বা অন্য ধাতু দিয়েও এ পরীক্ষা করতে পার। |
শিলা গঠন প্রক্রিয়া
এর আগে তোমরা জেনেছ যে শিলা তিন ধরনের হয়, যথা আগ্নেয় শিলা, পাললিক শিলা ও রূপান্তরিত শিলা। শিলার গঠন প্রক্রিয়া নির্ভর করে এটি কী দিয়ে তৈরি তার উপর। প্রথমে আগ্নেয় শিলার কথাই ধরা যাক। তোমরা কি জানো, আগ্নেয় শিলা কীভাবে গঠিত হয়েছে? হাজার হাজার বছর আগে পৃথিবীর তাপমাত্রা অনেক বেশি ছিল। ধীরে ধীরে পৃথিবী ঠান্ডা হয়ে আজকের বাসযোগ্য পৃথিবীতে পরিণত হয়েছে। পৃথিবী ঠান্ডা হওয়ার সময় ভূ-গর্ভের অভ্যন্তরে উত্তপ্ত ও গলিত শিলা (যা ম্যাগমা নামে পরিচিত) আটকে পড়ে। এই ম্যাগমা পরে ঠান্ডা হয়ে কঠিন শিলায় পরিণত হয়, যাকে আগ্নেয় শিলা বলে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে আগ্নেয় শিলা মূলত উত্তপ্ত মিশ্রণ ঠান্ডা হওয়ার ফলে তৈরি হয়েছে, নতুন পদার্থ সৃষ্টির মাধ্যমে নয়। তাহলে আগ্নেয় শিলার গঠন প্রক্রিয়া অবশ্যই একটি ভৌত পরির্বতন, ঠিক যেমনটি ঘটে জলীয়বাষ্প থেকে ঘনীভবনের মাধ্যমে পানি বা মেঘ তৈরির সময়।
এবার দেখা যাক পাললিক শিলা কীভাবে গঠিত হয়। জলবায়ুজনিত পরির্বতনের ফলে বাতাস, পানি, তুষার ও হিমবাহ, সমুদ্রস্রেত, ঝড়, জলোচ্ছাস, ইত্যাদির প্রভাবে আগ্নেয় শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ফলে চূর্ণবিচূর্ন হয়ে ছোটো ছোটো কণায় পরিণত হয়। এই ছোটো ছোটো কণাগুলো পানি বা বায়ু দ্বারা প্রবাহিত হয়ে নদ-নদীর মাধ্যমে সাগরে গিয়ে পড়ে এবং তলদেশে আস্তে আস্তে পলিরূপে জমা হয়। এই সময় এর সাথে জীবজন্তু বা গাছপালার দেহাবশেষও পলি স্তরের মাঝে আটকা পড়ে। পানির চাপ ও তাপে নানা রকম রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে জমাকৃত পলি ধীরে ধীরে কঠিন শিলায় পরিণত হয়, যাকে পাললিক শিলা বলে। যেহেতু পাললিক শিলার গঠনে নানাবিধ রাসায়নিক বিক্রিয়া জড়িত থাকে, তাই এদের গঠন প্রক্রিয়ায় রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে।
এবার রূপান্তরিত শিলার গঠন প্রক্রিয়া দেখে নেওয়া যাক। রূপান্তরিত শিলা তৈরি হয় আগ্নেয় বা পাললিক শিলা থেকে। তাপ, চাপ ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রভাবে আগ্নেয় বা পাললিক শিলা পরিবর্তিত হয়ে নতুন ধরনের যে শিলা তৈরি করে, তাকেই রূপান্তরিত শিলা বলে। যেমন বেলে পাথর (sandstone) একটি পাললিক শিলা এবং এটি রূপান্তরিত হয়ে কোয়ার্টজে (quartz) পরিণত হয় বলে কোয়ার্টজ একটি রূপান্তরিত শিলা। একই ভাবে চুনাপাথর থেকে মার্কেল এবং কয়লা থেকে গ্রাফাইট তৈরি হয় বলে মার্বেল ও গ্রাফাইটও রূপান্তরিত শিলা। রূপান্তরিত শিলার ধর্ম মূল শিলা থেকে আলাদা হওয়ায় এবং রূপান্তরের সময় রাসায়নিক বিক্রিয়া জড়িত থাকায় রূপান্তরিত শিলার গঠন এক ধরনের রাসায়নিক পরিবর্তন।
এই অধ্যায়ে আমরা যা যা শিখলাম
ভৌত পরিবর্তনের ফলে সংশ্লিষ্ট পদার্থের অবস্থার বা আকার আকৃতির পরিবর্তন ঘটে কিন্তু নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয় না ও পদার্থের ধর্মের কোনো পরিবর্তন হয় না।
Read more